পাখিরা ধানক্ষেতে বসে পোকা-মাকড় খেতে পারে এমন একটি পদ্ধতির নাম হলো পাচিং। এটি একটি পরিবেশবান্ধব পদ্ধতি। বিষাক্ত কীটনাশ ওষুধ ব্যবহার না করে ধানের পোকা আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যায় এমন একটি পদ্ধতির নাম পাচিং। এ পদ্ধতি কীটনাশকের ব্যবহার কমছে। সম্প্রতি বিভিন্ন জেলাতে এর ব্যাপক ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে। এ পদ্ধতি জনপ্রিয় হচ্ছে কৃষকদের কাছে। আমন খেতের ক্ষতিকর পোকা দমনে রাজশাহীর কৃষকরা এখন পরিবেশ বান্ধব পার্চিং পদ্ধতি ব্যবহারে উৎসাহী হচ্ছেন। চলতি মৌসুমে বেশিরভাগ চাষি পার্চিং পদ্ধতি ব্যবহার করে ক্ষতিকর পোকা দমন এর উদ্যোগ নেয়ায় জমিতে কমেছে বালাইনাশকের ব্যবহার।
কৃষিবিদরা বলছেন , প্রাকৃতিক এই পদ্ধতি ব্যবহার করার ফলে রাজশাহীতে এবার আমন ক্ষেতের পোকা দমনে কিটনাশকের ব্যবহার কম হয়েছে। এতে উপকারি পোকা জমিতে থেকে যাওয়ায় উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি পাবে। অন্যদিকে কিটনাশক কেনার খরচ থেকে চাষিরা রক্ষা পেয়েছে। আগামীতে পরিবেশ বান্ধব এই পদ্ধতির ব্যবহার রাজশাহীতে আরো বাড়বে বলে মনে করেন তারা।
রাজশাহীর বিভিন্ন এলাকার কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, পার্চিং হলো ধান রোপণের পরপরই ওই জমিতে কনচি, বাঁশ, কাঠ, শক্ত পাট কাঠি, মরা ডাল দ্ধারা তৈরি ইংরেজি “টি” অক্ষর বা আকর্ষি এর মত করে অথবা জিবন্ত গাছ হিসেবে ধৈঞ্চার গাছ মাটিতে পুতে দেওয়া বুঝায়। এক্ষেত্রে জিবন্ত গাছ ব্যবহার করলে তাকে বলে জিবন্ত পার্চিং এবং অন্যগুলো মরা পার্চিং। পার্চিং এমনভাবে স্থাপন করতে হবে যাতে পাখি তার ওপর বসে ধান গাছ হতে সহজে পোকা ধরে খেতে পারে। এ বছর মাজরা ও খাটো শুড় ঘাস ফড়িং পোকা দমনে এ পদ্ধতি ব্যবহার করে আমন চাষিরা ভালো উপকার পেয়েছেন কৃষকরা। ধান রোপণের পরপরই ৮ থেকে ১০টি পার্চিং স্থাপন করতে হয়। এ পদ্ধতিতে ক্ষতিকর পোকা দমন করলে জমিতে আর কিটনাশক দেবার তেমন প্রয়োজন হয়না। ফলে উপকারী পোকাগুলো জমির উর্বরা শক্তি বৃদ্ধিতে কাজ করতে পারে।
পবা উপজেলার উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মজিবর রহমান বলেন, নওহাটার আমন চাষি গিয়াস উদ্দিন ৫ বিঘায় এবং দুয়ারির চাষি হযরত আলী ২ বিঘায় এবং বাগসারার হাজী মামুনর রশিদ ৫ বিঘায় পার্চিং পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন। এতে তারা পোকা দমনে ভালো ফল পেয়েছেন। তাদের এলাকার অনেক চাষি এবার এই পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন। কৃষকরা বলেন , মরা পার্সিং সংরক্ষণ করলে কয়েক বছর ব্যবহার করা যায় এবং পরে তা জ্বালানি হিসেবে কাজে লাগানো যায়। তাছাড়া যেহেতু এর ওপর পাখি বসে তাই পাখির মল জৈব সার হিসেবে জমিতে যোগ হয়। অন্য দিকে ধৈঞ্চার পাতা ও শিকড় মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করে।
রাজশাহী কৃষি সমপ্রসারণ বিভাগ জানায়, চলতি আমন মৌসুমে রাজশাহীতে আবাদ হয়েছে ৭১ হাজার ৩১৪ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে শতকরা ৯১ দশমিক ৬৩ ভাগ জমিতে এবার পার্চিং পদ্ধতিতে পোকা দমন করা হয়েছে। যার মধ্যে মরা পার্চিং করা হয়েছে ৬৪ দশমিক ৬৩ ভাগ জমিতে এবং জিবন্ত পার্চিং করা হয়েছে শতকরা ২৭ ভাগ জমিতে। গত বছর শতকরা ৮৮ ভাগ জমিতে পার্চিং পদ্ধতিতে পোকা দমন করা হয়েছে।