তানজির খান রনি (ক্রাইম রিপোর্টার ) : রাজধানীর নারিন্দা কাঁচাবাজার এলাকার একটি বাসা থেকে গত ১৪ অক্টোবর শেখ জিসান নামে যে যুবকের মরদেহ উদ্ধার হয়েছে, তিনি স্ত্রীর মানসিক নির্যাতনে আত্মহত্যা করেছেন বলে অভিযোগ করেছে জিসানের পরিবার। তাদের দাবি, এ বিষয়ে অভিযোগ করলেও পুলিশ মামলা নিচ্ছে না। সোমবার (২৫ অক্টোবর) দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন জিসানের ফুপু ফারজানা শারমিন রুনা। এ সময় জিসানের দুই চাচাসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
জিসানের এক বছর বয়সে তার মা সংসার ছেড়ে চলে যান। ফুপুর কাছেই বড় হন তিনি। জিসানের প্রেমের বিয়ে হলেও আনুষ্ঠানিকতা হয়েছিল ফুপু এবং চাচাদের তত্ত্বাবধানেই। জিসানের বাবা বয়স্ক হওয়ায় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হতে পারেননি বলে জানান ফারজানা শারমিন রুনা। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, স্ত্রীকে খুব ভালোবাসতেন জিসান। প্রেম করে বিয়ে করেছিলেন তারা। কিন্তু বিয়ের পর থেকে জিসানের স্ত্রী তাকে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করেন। পরিবারের দাবি, জিসানের নামে থাকা কাঁচাবাজার এলাকার মসজিদ গলির বাসাটি বিক্রির চেষ্টা করেন তার স্ত্রী। শেষে ব্যর্থ হয়ে মর্টগেজ (বন্ধকি) রেখে ঋণ নেন। ঋণের টাকা জিসানের শ্বশুর সাজ্জাদ হোসেন তুলে নেন।
এরপর ওই বাসা ফেরত পেতে জিসান চেষ্টা করলে স্ত্রী তাকে তালাকের হুমকি দেন। জিসানের পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, এক পর্যায়ে স্ত্রীর মানসিক নির্যাতন সইতে না পেরে অভিমান করে আত্মহত্যা করেন জিসান। সংবাদ সম্মেলনে তারা আরও দাবি করেন, করোনাকালীন ও করোনা শিথিল হওয়ার পর মানসিক চাপে রীতিমতো দাম্পত্য কলহ সৃষ্টি হয় জিসানের সংসারে। এ অবস্থায় স্ত্রী রাগ করে বাপের বাড়ি চলে গেলে ফোনে বেশ কয়েকবার তাকে ফিরে আসার অনুরোধ জানিয়ে ব্যর্থ হন জিসান। এরপর আত্মহত্যার দিন জিসান তার স্ত্রীকে আনতে যান। কিন্তু তিনি ফিরে না আসার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেন এবং বাসা বন্ধকি রেখে নেওয়া টাকা ফেরত দিতে অস্বীকার করেন।
এরপর স্ত্রীর পরিবারের সদস্যরা জিসানকে অপমান করে তাড়িয়ে দেন। ওই ঘটনার পর মানসিক চাপে রাতে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন জিসান। আত্মহত্যা করার আগে সব বিষয় চিরকুটে লিখে যান, যেটি জিসানকে শেষবার দেখতে আসারছলে স্ত্রী নষ্ট করে ফেলেছেন বলে দাবি তার পরিবারের সদস্যদের। তারা আরও অভিযোগ করেন, জিসানের স্ত্রীকে কোনো ধরনের জিজ্ঞাসাবাদ না করে এবং জবানবন্দি না নিয়েই পুলিশ ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ মর্গে পাঠায়। পরদিন সকালে ওয়ারী থানায় গিয়ে বিষয়টি নজরে আনলেও জিসানের স্ত্রীর জবানবন্দি ছাড়াই এই মৃত্যুকে অপমৃত্যু বলে প্রতিবেদন তৈরি করে পুলিশ। সেই সাথে পরিকল্পিত ভাবেজিসানের স্ত্রী মাহিকে বাদ দিয়েছে মামলার তদন্তকারী পুলিশকর্মকর্তা।
ঐ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তারম ফোন বন্ধ পাওয়া যায়, পরবর্তীতে এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওয়ারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কবির হোসেন হাওলাদার বলেন, ওই ঘটনায় ইউডি (অপমৃত্যুর) মামলা হয়েছে। জিসানের মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। পরস্পরের বিরুদ্ধে অভিযোগের জায়গা থেকে তারা সংবাদ সম্মেলন করেছেন। জিসানের স্ত্রীর জবানবন্দি না নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি বলেন, ঘটনার (জিসানের আত্মহত্যা) সময় নিহতের স্ত্রী বাসায় ছিলেন না।