মজিবর রহমান শেখ, বালিয়াডাঙ্গী(ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধি: ঠাকুরগাঁও জেলার কৃষকদের মাঝে বিরাজ করছে হতাশা আর বিষাদ। দবিরুল ইসলাম অর্থের অভাবে আমন ধান রোপন করতে পারেননি। তাই এই এনজিও সংস্থার কাছে ঋনের টাকা শোধ করার জন্য সরকারি সহযোগিতা চেয়েছেন ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকরা। কৃষকরা এ ঘাতক রোগের কবল থেকে মুখের ভাত বাঁচাতে কৃষি বিভাগ আর বালাইনাশক ডিলারদের পরামর্শে ছত্রাকনাশক স্প্রে করেও বাঁচাতে পারছেন না খেতের ফসল। কিন্তু এ বছর বাজারে আমন ধানের নায্যমূল্য পেয়ে খুশি অনেক কৃষক। তাই দবিরুল কোনো উপায়ে টাকা যোগাড় করে বোরো ধান রোপন করেন। স্থানীয় এক এনজিও সংস্থার কাছ থেকে ১৫ হাজার টাকা ঋণও নেন। সেইসঙ্গে বাড়ির দু’টি পোষা গরু বিক্রি করে বোরো ধান আবাদ শুরু করেন। কিন্তু কয়েকদিন আগে হঠাৎ কষ্টের কাঙ্খিত ফসল চিটায় পরিপূর্ণ। শুধু দবিরুল ইসলামের খেতের অবস্থাই এমন নয় ঠাকুরগাঁও জেলার প্রায় ২০ ভাগ কৃষকের ধানের একই অবস্থা। কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, দিনে গরম, রাতে ঠান্ডা, ঘন কুয়াশা, মেঘাচ্ছন্ন আকাশ, গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি আর নাইট্রোজেনের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় ঠাকুরগাঁওয়ে ব্রি-২৮ জাতের আগাম ধান আক্রান্ত হয়েছে ছত্রাকজনিত ব্লাস্ট রোগে। আর কদিন বাদেই ধানের মৌ মৌ গন্ধে কৃষকের ঘর আর আঙিনা ভরে যাওয়ার কথা থাকলেও সেখানে এদিকে বিভিন্ন এনজিও সংস্থা থেকে টাকা ধার নিয়ে ধান চাষ করে পরিশোধ করার দুশ্চিন্তায় জীবনযাপন করছেন অনেক কৃষক। তবে কৃষি বিভাগ কৃষকের অভিযোগ অস্বীকার করে সামান্য পরিমাণ খেত ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হওয়ার দাবি করছেন। বেগুনবাড়ি নতুনপাড়া এলাকার প্রান্তিক এক কৃষক বলেন, তার চার বিঘা জমির ব্রি-২৮ জাতের রোপা খেত সবল সতেজ হয়ে বেড়ে উঠেছে। খেতের গোছাও হয়েছে মজবুত। কিন্তু শীষ বের হওয়ার পর চিটায় পরিণত হতে থাকে ধানের শীষ। কৃষি বিভাগের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে ওষুধ এনে তিনবার স্প্রে করা হয়। কিন্তু তাতেও কোনো কাজ হয়নি। মাত্র তিন-চার দিনের মাথায় পুরো খেতের শীষ সাদা হয়ে যায়। পরিবার পরিজন নিয়ে আগামী দিনগুলো কিভাবে কাটবে এ আশঙ্কায় দিশেহারা এই প্রান্তিক কৃষক। আরো অনেক কৃষক জানিয়েছেন, আমরা স্থানীয় এনজিও সংস্থার কাছে ঋণ নিয়ে ধান চাষ করেছি। ধান বিক্রি করে ঋণ শোধ করব। কিন্তু এখন খেতের যে অবস্থা আমাদের পথে বসা ছাড়া কোনো উপায় নেই। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গোটা জেলার প্রায় ৬০ হাজার হেক্টর বোরো আবাদের মধ্যে ২০ ভাগ জমির খেতের একই চিত্র। খেতের ধানের শীষে নেই কোনো দানা। এছাড়াও ওইসব ধানের খড় গো-মহিষও খাচ্ছে না। বেশির ভাগ ব্রি-২৮ জাতের সব ধানখেত ব্লাস্ট রোগে চিটা হওয়ায় সর্বহারা কৃষকেরা সরকারের সহযোগিতা দাবি করেছে। অপরদিকে সদর উপজেলার অধিকাংশ এবং বালিয়াডাঙ্গী, রাণীংশকৈল উপজেলার বিস্তৃত এলাকাজুড়ে ধানখেতে রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। হতাশাগ্রস্থ কৃষকরা জানান, এমতাবস্থায় পরার্মশের জন্য মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তাদেরও পাচ্ছেন না তারা। ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কেএম মাউদুদুল ইসলাম জানান, এবারে জেলায় ৬০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ করা হয়েছে। এর কিছু জমির ধান ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়েছে। তবে খেত বাঁচাতে কৃষককে সার্বিক পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। খাদ্য বিভাগ বলছে, এই বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে না পারলে খাদ্য শষ্যের উদ্বৃত্ত এলাকা ঠাকুরগাঁওয়ে এবার বোরো ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত হবে।