ঢাকাপোস্টবিডি.কম : আগামী ২০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠেয় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে ঘিরে সরগরম সাতক্ষীরা জেলার তালা ও কলারোয়া উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকা। তবে ভোটের দিন যতই এগিয়ে আসছে, জনমনে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ততই বাড়ছে। বিরোধী দল বিএনপি নির্বাচনে প্রার্থী না দিলেও আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা মার্কার প্রার্থীরা সুবিধাজনক স্থানে, এমনটি বলা যাচ্ছে না। কারণ বেশির ভাগ ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র হিসেবে প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামী লীগেরই লোকজন। এই বিদ্রোহী প্রার্থীরা নৌকার জন্য দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছেন। কোথাও কোথাও নৌকার প্রার্থীরা কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন।
নির্বাচন অফিস সূত্র জানায়, তালা উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ৪৩ জন প্রার্থী মাঠে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। আর কলারোয়া উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী ৩৮ জন। প্রার্থীরা এখন পথসভা, গণসংযোগ, মতবিনিময়সহ ভোটারদের দরজায় ভোট প্রার্থনা করছেন। তবে প্রতিটি ইউনিয়নে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নৌকার বিপক্ষে একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী লড়াই করছেন। ফলে অনেক ইউনিয়নে নৌকার বিজয় নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বিদ্রোহীদের সতর্কবার্তা এবং সর্বশেষ বিদ্রোহীদের বহিষ্কার করা হলেও খুব বেশি কাজে আসেনি। বরং অনেক স্থানে বিদ্রোহীদের চাপে প্রচার-প্রচারণায় গতি আনতে পারছেন না সরকারি দলের প্রার্থীরা।
সবেজমিন ঘুরে জানা গেছে, বিদ্রোহী প্রার্থীদের কাউকে কাউকে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতারা সমর্থন দিচ্ছেন। এতে সংঘর্ষ-সহিংসতা বাড়ার আশঙ্কা করছেন ভোটাররা। সম্প্রতি কলারোয়া উপজেলার কেড়াগাছি ইউনিয়নে দুই বিদ্রোহী প্রার্থী তাঁদের কর্মী-সমর্থক নিয়ে নৌকার প্রার্থী ও তাঁর কর্মী-সমর্থকদের ওপর হামলা চালান। এরপর বিদ্রোহী প্রার্থী ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মারুফ হোসেনের ‘মোটরসাইকেল’ প্রতীকের নির্বাচনী কার্যালয় ভাঙচুর করেন নৌকা প্রতীকের কর্মী-সমর্থকরা। প্রতিক্রিয়ায় মারুফ হোসেনের কর্মী-সমর্থকরা কাকডাঙ্গা মোড় এলাকায় নৌকার নির্বাচনী কার্যালয় বন্ধ করে দেন।
কলারোয়ার জয়নগর ইউনিয়নে তিন বিদ্রোহী প্রার্থীকে মোকাবেলা করতে হচ্ছে নৌকার প্রার্থীকে। সেখানে এক পক্ষ অন্য পক্ষকে দেখে নেওয়ার হুমকিও দিচ্ছে। তালা উপজেলায়ও দুটি ইউনিয়নে বিদ্রোহী ও নৌকার কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে হামলা-পাল্টাহামলার ঘটনা ঘটেছে। উপজেলা আওয়ামী লীগের এক প্রভাবশালী নেতার মদদে খলিলনগর ইউনিয়নে বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন এক স্বতন্ত্র প্রার্থী। জালালপুর ইউনিয়নে দুই পক্ষের হামলা ও পাল্টাহামলায় বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।
জালালপুরের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান এম মফিদুল হক লিটু অভিযোগ করেন, নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী রবিউল ইসলাম মুক্তি নির্বাচনে নিশ্চিত পরাজয় জেনে সন্ত্রাসী ক্যাডার দিয়ে তাঁর কর্মী ও ভোটারদের ওপর হামলা চালাচ্ছেন। রাতের আঁধারে পোস্টার ও ব্যানার ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে। তালা উপজেলার খলিলনগর ইউনিয়ন পরিষদের নৌকা মার্কার প্রার্থী ও সাবেক চেয়ারম্যান প্রণব ঘোষ বাবলু অভিযোগ করেন, তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী বিগত নির্বাচনে একটি কেন্দ্র দখল করে নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছিলেন। এবারও সেই ষড়যন্ত্র করছেন।
তালা সদর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান ও জাতীয় পার্টির লাঙল প্রতীকের প্রার্থী এস এম নজরুল ইসলাম জানান, বর্তমান চেয়ারম্যান ও নৌকা প্রতীকের প্রার্থী নানা কারণে এখন জনবিচ্ছিন্ন। যে কারণে ভোটারদের ভয়ভীতি দেখিয়ে ও কেন্দ্র দখল করে নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে চাইছেন।
নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন কেড়াগাছি ইউপি চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মারুফ হোসেন। তিনি বলেন, বর্তমান বাস্তবতায় সুষ্ঠু ভোট হওয়া নিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তবে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সব প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি জানান, নির্বাচনে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ থাকবে। কোনো প্রার্থী আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে, আইনের ব্যতয় ঘটালে বা চেষ্টা করলে পুলিশ তাঁর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। এরই মধ্যে দুই প্রার্থীসহ অনেকের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। দুই সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।