মেলায় গল্প, উপন্যাস, কবিতা বিক্রি হয় বেশ। এখন তো নানা বিষয়ের বই প্রকাশ হচ্ছে। তবে এতসব বই প্রকামের ভিড়ে নাটকের বই চোখেই পড়ে না। দেশে এত নাটকের সংগঠন। নাটকের চাহিদাও কম নয়, কিন্তু লেখকদের তেমন আগ্রহ নেই নাটক লেখার। গল্পকার, ঔপন্যাসিকদের মাঝে টিভি নাটকের স্ক্রিপ্ট লেখার প্রতি আগ্রহ দেখা যায়। কিন্তু মঞ্চ নাটক লেখার প্রতি আগ্রহ তেমন নেই। মেলায় ১৫ দিন পর্যন্ত বই এসেছে ১৭শ ৭৬টি। এর মধ্যে নাটকের বই সাকুল্যে ১১টি। মঞ্চকর্মীদের হাতেগোনা কিছু নাটকের বই প্রকাশ পায় মেলায়। নাট্য সংগঠন ‘থিয়েটার’ এর স্টল রয়েছে মেলায়। এটাই একমাত্র নাটকের বই এবং নাটক সম্পর্কিত বই নিয়ে হাজির হয় পাঠকের সামনে।
নওগাঁর নাট্যকর্মী রফিকুদ্দৌলা রাব্বী প্রতি বছর বইমেলায় আসের নতুন নাটকের বই কিনতে। যা নাগালে পান তাই কিনে নিয়ে যান। সারা বছর সেসব নাটকই মঞ্চে অভিনয়ে জন্য তৈরি করেন তাদের দল। তিনি বললেন, বর্তমান সময়ের কথাকে তুলে ধরে এমন নাটক খুব কম। অনুবাদ নাটক পাওয়া যায়। কিছু কিছু নাটকের দলের সাম্প্রতিক সময়কে নিয়ে করা নাটকের স্ক্রিপ্ট জোগাড় করে আমরা অভিনয় করি। তবে, সত্যিকার অর্থে নাটকের বই নেই বললেই চলে। বিশেষ করে সৈয়দ শামসুল হক ও সেলিম আল দীনের প্রয়াণের পর নাট্য সাহিত্যে তৈরি হয় বিপুল শূন্যতা। এ দুজন নানা নাট্যগ্রন্থ উপহার দিয়েছেন। তাদরে পর নাট্য সাহিত্যে আর সেভাবে কেউ উঠে আসেননি। তারপরও কেউ কেউ লিখছেন।
নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার দীর্ঘদিন ধরে ‘থিয়েটার’ পত্রিকা সম্পাদনা করছেন। তিনি বললেন, নাটকের বই একবারেই নগন্য। নাটকের বই প্রকাশকরা বের করতে চান না। অথচ থিয়েটার কর্মীদের কাছে যেমন এর চাহিদা রয়েছে তেমনি সাহিত্যমান হিসাবেও পাঠকদের কাছে নাটকের গুরুত্ব রয়েছে। তাই বিষয়ভিত্তিক এসব প্রকাশনার দিকেও প্রকাশকদের নজর দেয়া উচিত। মঞ্চ সফল নাটকের বই, সাহিত্যমূল্য সম্পন্ন নাটকের বই প্রকাশ পেলে তা বিক্রি হয্ পাঠক তা কিনে পড়েন। ইদানিং কিছু কিছু প্রকাশক নাটকের বই প্রকাশে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।
এবারের মেলায় ‘থিয়েটার’ পত্রিকার নতুন সংখ্যা প্রকাশ পেয়েছে। এছাড়া থিয়েটারের স্টলে রয়েছে বেশ কিছু নাটকের বই। আবদুল্লাহ আল মামুন, রামেন্দু মজুমদার, মুনীর চৌধুরীর নাটকের বই।
মৃত্যুর আগেও বাংলার দর্শকদের জন্য হ্যামলেট এর অনুবাদ উপহার দিয়ে গেছেন সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক। বইটি বইমেরায় পাওয়া যাচ্ছে। এটি প্রকাশ করেছে অন্যপ্রকাশ। এছাড়া চারুলিপি এবার এনেছে নাট্যব্যক্তিত্ব তারিক আনাম খানের অনুবাদ ও রূপান্তর করা নাটক সমগ্র। এছাড়াও মেলায় এসেছে ‘স্বপ্নভূমি’ শ. ম. শামসুল আলমের মুক্তিযুদ্ধের নাটক, এছাড়া মেলায় এবার প্রকাশ পেয়েছে চন্দ্রছাপ এনেছে অশোক কুমার বিশ্বাসের নাটকের গ্রন্থ প্রভৃতি।
গতকাল বুধবার মেলার পনেরতম দিনে মেলা ছিল জমজমাট। সব স্টলেই নতুন বই চলে এসেছে। নতুন বইয়ের ছটায় এখন জ্তলজ্তল করছে বইমেলা। সন্ধ্যার পর ছিল বিপুল উপস্থিতি। ঐতিহ্য প্রকাশনীর ব্যবস্থাপক আমজাদ হোসেন কাজল বলেন, ‘গত দু’দিন উত্সব থাকলেও বিক্রি কিন্তু তুলনামুলক কম হয়েছে। পহেলা ফাল্গুন ও ভালবাসা দিবসে মেলায় ছিল উত্সব পরিবেশ। মানুষ মেলা প্রাঙ্গণে ঘুরেছে আর ছবি তুলেছে, সেভাবে বই কেনেনি।
ডিজিটাল বাংলাদেশ সম্পর্কিত গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন
প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ও আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক আব্দুস সোবহান গোলাপের ‘বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার দর্শন : ডিজিটাল বাংলাদেশ অ্যান্ড সোস্যাল চ্যালেঞ্জ’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠিত হয়েছে গতকাল। জিনিয়াস পাবলিকেশন থেকে প্রকাশিত বইটির মোড়ক উন্মোচন করেন সড়ক যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘বই হচ্ছে জীবনের পাল তোলা নৌকা। এই নৌকায় চড়ে এগিয়ে যাবে নতুন প্রজন্ম। যেমন করে এগিয়ে চলেছেন শেখ হাসিনা।’
আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপের নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে মিছিল করে মেলায় প্রবেশ করেন নেতৃবৃন্দ।
মোড়ক উন্মোচন
গতকাল ৩১টি নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। গতকাল মেলার মোড়ক উন্মোচন মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয়েছে সাংবাদিক-লেখক মামুন মিজানুর রহমানের প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘হেসে হেসে ডুবেছিল চাঁদ’। চৈতন্য থেকে প্রকাশিত এ গ্রন্থটির মোড়ক উন্মোচন করেন লেখকের বন্ধু, সহকর্মী ও ঘনিষ্ঠজনরা।
ডা. শাহজাদা সেলিমের ‘ডায়াবেটিসের উপর নজর রাখুন : নিজেকে রক্ষা করুন’ এবং ‘গর্ভকালীন ডায়াবেটিস ও থায়রয়েড হরমোনজনিত সমস্যা ও করণীয়’ বই দু’টির মোড়ক উন্মোচন করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান।
নতুন বই
মেলার ১৫তম দিনে নতুন ১৪৩টি বই প্রকাশিত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে: প্রফেসর এমাজউদ্দিন আহমেদের ‘গণতন্ত্র এখন’, মাহফুজ উল্লাহর ‘মুক্ত জীবন রুদ্ধ প্রাণ’, দি ইউনিভার্সেল একাডেমি; গোলাম কুদ্দুছের ‘কালের ধ্বনি’, নালন্দা; কামাল লোহানীর ‘শব্দের বিদ্রোহ’, জয়তী; ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেনের ‘ভাষা আন্দোলন অমর একুশে ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’, একুশে বাংলা প্রকাশন; আলম তালুকদারের ‘ডিম ডিম ভূতের ডিম’, কথাপ্রকাশ; রকিব হাসানের ‘কেউটের বিষ’, কাকলী প্রকাশনী; সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের ‘বিচিত্র স্বাদের গল্প’, চন্দ্রাবতী একাডেমি; সেলিনা হোসেনের ‘বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ’, মাওলা ব্রাদার্স।
মূলমঞ্চের আয়োজন
গতকাল গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘সমর সেনের জন্মশতবার্ষিকী’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক বেগম আকতার কামাল। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন ‘কালি ও কলম’ সম্পাদক আবুল হাসনাত, অধ্যাপক রফিকউল্লাহ খান এবং কবি পিয়াস মজিদ। সভাপতিত্ব করেন ভাষাসংগ্রামী আহমদ রফিক। সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ছিল গোলাম কুদ্দুছের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘বহ্নিশিখা’ শিল্পীদের পরিবেশনা। সঙ্গীত পরিবেশন করেন শিল্পী সাইদুর রহমান বয়াতি, আলম দেওয়ান, রুশিয়া খানম, আনোয়ার বাউল, রনজিত দাস বাউল এবং মমতা দাসী বাউল।
আজকের অনুষ্ঠান
আজ বৃহস্পতিবার গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘সত্তর দশকের কবিতা’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন কবি মুজিবুল হক কবীর। সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।